উখিয়া নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৭/০৩/২০২৫ ৪:৪৬ এএম , আপডেট: ০৭/০৩/২০২৫ ৯:৩৭ এএম

যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক সহায়তা কমানোর ফলে বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) খাদ্য সহায়তার পরিমাণ অর্ধেক কাটছাঁট করার ঘোষণা দিয়েছে। আগামী ১ এপ্রিল থেকে কার্যকর হতে যাওয়া এই সিদ্ধান্তের ফলে প্রতি মাসে রোহিঙ্গাদের জন্য মাথাপিছু রেশন বা খাদ্য সহায়তা মাত্র ৬ ডলারে নামবে, যা আগে ছিল ১২.৫ ডলার। অর্থসংকটের কারণে এই কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে সংস্থাটি জানিয়েছে।

বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের তদারককারী সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তা মোহাম্মদ মিজানুর রহমান রয়টার্সকে বলেন, ‘তারা এখন যেটুকু খাদ্য সহায়তা পাচ্ছে, তা-ও যথেষ্ট নয়। নতুন এই কাটছাঁটের ফলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘গতকাল মৌখিকভাবে বিষয়টি জানতে পারি এবং আজ আমি আনুষ্ঠানিক চিঠি পেয়েছি। আগামী ১ এপ্রিল থেকে খাদ্য বরাদ্দ বাবদ ৬ দশমিক ৫ ডলার দেওয়া হবে।

বিশ্বের বৃহত্তম শরণার্থীশিবির কক্সবাজারে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বসবাস করছে, যাদের অধিকাংশ ২০১৬ ও ২০১৭ সালে মিয়ানমারে দমনপীড়নের শিকার হয়ে পালিয়ে আসে। দীর্ঘদিন ধরে রোহিঙ্গারা মানবিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল হয়ে আছে।

ডব্লিউএফপি জানিয়েছে, তারা রোহিঙ্গাদের জন্য ১২.৫ ডলার সহায়তা বজায় রাখতে তহবিল সংগ্রহের চেষ্টা করেছিল, কিন্তু প্রয়োজনীয় অর্থের অভাবে তা সম্ভব হয়নি। সংস্থাটি সতর্ক করে বলেছে, ‘খাদ্য সহায়তা ৬ ডলারের নিচে নেমে গেলে তা ন্যূনতম বেঁচে থাকার মাত্রার চেয়ে কম হয়ে যাবে এবং মৌলিক পুষ্টির চাহিদা পূরণ করতে পারবে না।’

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে খাদ্য সহায়তা ৮ ডলারে নামিয়ে আনার পর ৯০ শতাংশ রোহিঙ্গা পর্যাপ্ত খাবার পেতে হিমশিম খায় এবং ১৫ শতাংশ শিশু তীব্র অপুষ্টির শিকার হয়।

মিজানুর রহমান বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক সহায়তা কমানোর কারণে এই সংকট আরও তীব্র হয়েছে। এবার ৬ ডলারে নামিয়ে আনার ফলে একজন রোহিঙ্গা শরণার্থী দৈনিক মাত্র ২৪ টাকা মূল্যের খাদ্য পাবে। দেশে একটি কলার দাম ১০-১২ টাকা, আর একটি ডিমের দাম ১২-১৪ টাকা।

ইউএসএআইডি জানিয়েছে, তারা ২০১৭ সাল থেকে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারে জরুরি খাদ্য সহায়তা, নগদ অর্থ প্রদান ও পুষ্টি সহায়তা দিয়ে আসছে। রোহিঙ্গা সহায়তা কর্মসূচির জন্য ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দেওয়ার কথা ছিল, যা মোট তহবিলের ৫০ শতাংশের বেশি। কিন্তু সাম্প্রতিক অর্থসংকটে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়নে পরিচালিত হাসপাতালগুলোর কার্যক্রম কমিয়ে আনা হয়েছে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনাও ব্যাহত হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক সহায়তা কমানোর কারণে এই সংকট তীব্র হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের শুরু থেকে বৈদেশিক সহায়তা হ্রাসের প্রভাব বিশ্বব্যাপী মানবিক সহায়তা কার্যক্রমে পড়েছে।

কক্সবাজার সফরে এসে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক প্রধান ফিলিপ্পো গ্রান্ডি বলেন, ‘যদি দাতাদের সহায়তা নাটকীয়ভাবে কমে যায়, তাহলে বাংলাদেশ সরকার, ত্রাণ সংস্থাগুলো ও শরণার্থীদের প্রচেষ্টা ব্যাহত হবে। এতে হাজারো মানুষ অনাহার, রোগ ও নিরাপত্তাহীনতার ঝুঁকিতে পড়বে।

পাঠকের মতামত